
Home দৃষ্টিপাত > অবৈধ যাত্রা : মাদারীপুরে নিখোঁজ শতাধিক
এই পৃষ্ঠাটি মোট 859 বার পড়া হয়েছে
অবৈধ যাত্রা : মাদারীপুরে নিখোঁজ শতাধিক
পরিবারের লোকজনকে না জানিয়ে কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ করেই বিদেশে যাওয়ার জন্য এলাকা ছেড়েছিলেন মাদারীপুরের শতাধিক কিশোর ও যুবক। দীর্ঘ এক-দেড় বছর ধরেও অনেকের খবর নেই। এই ধরণের বিদেশ নেয়ার বিভিন্ন প্রতারণার ঘটনায় মাদারীপুরে অর্ধশতাধিক মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তাদের দাবী টাকার দরকার নেই, তাদের সন্তানদের এনে দেয়া হোক। আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে অনেকে বেরিয়ে এসেছেন, কিন্তু এসব নিখোঁজ পরিবারের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়নি।
মানবপাচার
প্রতিকী ছবি
সরেজমিনে জানা গেছে, বিদেশ গিয়ে সংসারের স্বচ্ছলতা আনার আশায় গ্রাম্য এক দালালের ফাঁদে পড়ে হঠাৎ করেই বাড়ি ছেড়ে যায় মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের ‘চৌহদ্দি-খালপাড়’ গ্রামের হাসমত আলী ও নূর মোহাম্মদ নামের দুই চাচাতো ভাই। দীর্ঘ ৯ মাসেও তাদের কোন খোঁজ না মেলায় তাদের বাড়িতে এখন কান্নার রোল।
ছেলের কথা জানতে চাইলে হাসমত আলীর বাবা রাজ্জাক মোল্লা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমাদের কিছু না বলেই ওরা ছেলেকে নিয়ে গেছে। দুই মাস পর মোবাইল ওদের সাথে কথা বলিয়ে দিয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পাঠাতে বলে। আমরা ওই টাকা পাঠিয়েছি। কিন্তু এরপর থেকে ৯ মাস ধরে ওদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই।
এদের মত আরও প্রায় শতাধিক যুবক নিখোঁজ রয়েছে মাদারীপুরে। এর মধ্যে রাজৈর উপজেলার আমগ্রামেই রয়েছে ৭ জন। এই গ্রামের বিনাদ, ওবায়দুর, অহিদুর, হান্নান, জহিরুল, রাসেল ও হানিফ দালালদের খপ্পরে পড়ে এখন নিখোঁজ। তাদের সবার পরিবারে এখন কান্নার রোল।
বাড়ি থেকে যাওয়ার এক-দেড় মাস পরে ওই পরিবারের মোবাইল ফোনে কল আসে। এ সময় অনেকের সাথে কথা বলিয়ে দেয় দালালচক্র। তখন তারা জানায়, কক্সবাজার থেকে জাহাজে থাইল্যান্ডে বা মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছে।
নিখোঁজের স্বজন খালপাড় গ্রামের উকিল মোল্লা বলেন, ওদের যখন কক্সবাজার থেকে থাইল্যান্ডের জাহাজে তুলে দেয় তখন দালাল আজিজুল বয়াতি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এরপর সে ৪ মাস জেল খেটে কক্সবাজার থেকে মাদারীপুরে এসেছে কিন্তু এখনও আমরা চাচাতো ভাই ও ভাইয়ের ছেলে দুজনের কোন খোঁজ পাইনি। আমরা নূর মোহাম্মদ ও হাসমত আলীর সন্ধান চাই। আদালতে মামলা করার পর আজিজুল বয়াতি ও তার পরিবারের লোকজন আমাদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে ও মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে।
মাদারীপুর জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য অ্যাডভোকেট মহিদুল ইসলাম জানান, মালয়েশিয়া নেয়ার ঘটনায় মানবপাচার আইনে মাদারীপুর আদালতে সুনির্দিষ্ট মামলা হয়েছে, এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে থানা পুলিশকে। এই ধরণের বিদেশ নেয়ার বিভিন্ন প্রতারণার ঘটনায় মাদারীপুরে গত দুই বছরে অর্ধশতাধিক মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
সন্তানের কথা চিন্তা করে অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে দালালকে দিয়েছেন দরিদ্র বাবা-মা। কিন্তু এখন তাদের আর খোঁজ নেই। দরিদ্র ও বয়োবৃদ্ধ মানুষগুলো আশা নিয়ে বেঁচে আছেন একদিন তাদের সন্তানরা তাদের বুকে ফিরে আসবেন। কিন্তু থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার গণকবরে যেসব তরুণ চিরনিদ্রায় শায়িত আছে তাদের পরিবারের অপেক্ষার প্রহর কী শেষ হবে?
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার খোন্দকার ফরিদুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে নেয়া স্থানীয় দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরউল্লাহ জানান, কোথাও খোঁজ পাওয়া মাত্রই সরকারের মাধ্যমে পাচার হওয়া তরুণদের উদ্ধার করে মাদারীপুরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে। এক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: ATN TIMES
রিপোর্ট : জহিরুল ইসলাম খান, মাদারীপুর